⏱️ বাংলাদেশে ৩০ মিনিটের নিয়ম—বাস্তবতায় কতটা সম্ভব?

রক্ত দান করা এক অদ্ভুত তৃপ্তির বিষয়। কারণ এর প্রতিদান পৃথিবীতে কেউই দিতে পারবে না। এটি এক ধরনের স্বর্গীয় শান্তি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমাদের দান করা রক্ত আসলেই কতটা কাজে লাগছে?
রক্ত সংগ্রহ করার জন্য নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, রক্ত সংগ্রহ করতে হবে Blood Collection Monitor ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা একটি গরিব দেশ(!!!), তাই রিসোর্স সীমিত। জিনিসটির গুরুত্ব আমরা পুরোপুরি অনুধাবন করতে না পারায় একে দামী যন্ত্র হিসেবেই কেবল মূল্যায়ন করি। চাহিদা কম থাকায় দেশে তৈরি হয় না, বিদেশ থেকে উচ্চ কর দিয়ে আমদানি করতে হয়।
এই মেশিন থাকলে রক্ত সংগ্রহের সময় নির্দিষ্ট বিরতিতে ব্যাগে প্রবেশ করা রক্ত সঙ্গে সঙ্গে Anti coagulant এর সাথে মিশে যায়। একই সঙ্গে মেশিনটি কতটুকু রক্ত সংগ্রহ হলো সেটিও দেখায়। ৪৫০ মিলিলিটার রক্তের জন্য যেহেতু ৬৩ মিলিলিটার Anti coagulant প্রয়োজন, তাই সঠিক পরিমাণ দেখা অত্যন্ত জরুরি। কম বা বেশি হলে সমস্যা তৈরি হয়।
যদি এই মেশিন না থাকে, তবে করণীয় হলো প্রতি ৩৫–৪০ সেকেন্ড অন্তর ব্লাড ব্যাগকে ৫–৮ বার উল্টে দেওয়া (inversion)। অর্থাৎ ব্যাগটিকে পুরোপুরি ঘুরিয়ে নিতে হবে। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু সেটা আলোচনা করতে গেলে আসল বিষয় থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।এবং রক্ত সংগ্রহ শেষ করে টিউব কেটে ফেলার পর পুনরায় ৫-৮ বার Inversion করা।
যদি এটি না করা হয়, তবে ব্যাগের যে অংশে Anti coagulant মিশবে না, fibrin mesh তৈরি হবে। এর ফলে ওই জায়গায় Red cells, WBC and Platelet আটকে যাবে। অপর অংশ হয়ে পড়বে সেলবিহীন (acellular)।
এই রক্ত যদি দেওয়া হয়, তাহলে রোগীর মধ্যে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে—যেমন febrile non-hemolytic transfusion reaction, sepsis, clotted blood transfusion ইত্যাদি। যেহেতু Fibrin নিজে ব্যাকটেরিয়াকে দ্রুত বংশবিস্তার করতে সাহায্য করে, তাই রক্ত যত দ্রুত দেওয়া হোক না কেন, সেপসিস প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, রক্তব্যাগ সরবরাহের সময় সেটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে এমন অস্বাভাবিক কিছু আছে কিনা। কিন্তু বাংলাদেশে মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবাই উদাসীন থাকায় এটি আশা করা প্রায় অসম্ভব। ফলে প্রশ্ন দাঁড়ায়—তাহলে বেডসাইড চিকিৎসকের করণীয় কী?
সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো—রক্তব্যাগ হাতে পাওয়ার পর সেটিকে ১৫–২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা, যাতে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা বোঝা যায়। অনেকেই প্রশ্ন করবেন: “তাহলে কি ৩০ মিনিটের মধ্যে ট্রান্সফিউশন শুরু করার নিয়ম বদলে গেল?” না, নিয়ম এখনো একই। কিন্তু আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে কাঠামোগতভাবে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনো দেশীয় গাইডলাইন নেই, আবার আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছেও বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়নি। তাই আমরা কেবল কপি-পেস্ট করা শিক্ষার ওপর নির্ভর করছি। দায় আমাদেরই।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাংক থেকে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্ড পর্যন্ত পৌঁছাতেই ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। তবুও বেডসাইডে হাতে পাওয়ার পর অন্তত ৫–৭ মিনিট ব্যাগ ঝুলিয়ে ক্লিনিক্যাল চেক করা উচিত। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি যে ট্রান্সফিউশনের আদেশ দিচ্ছেন, তা রোগীর জন্য নিরাপদ।
ছবিতে দুটি বিষয় দেখানো হয়েছে—একটিতে দেখা যাচ্ছে দানের সময় ব্লাড ব্যাগ মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে, আর অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে সংগ্রহ শেষে hemolyzed ব্লাডব্যাগ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *