যখন আমরা রক্তদান করি তখন সাধারণত আমাদের শরীরে যতটুকু রক্ত রয়েছে তার ৮-১০ ভাগ রক্তদান করা হয়। গড়পড়তা আমরা ধরে নিই আমাদের শরিরে ৫ লিটার রক্ত রয়েছে এবং সেই হিসাবে ৪৫০-৫০০ মিলি রক্তদান করা হয়। এই হিসাব আসলে দেশের বাইরে গবেষণার আলোকে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের দেশের রক্তদাতাদের গড় ওজন যেমন অন্য অনেক দেশের তুলনায় কিছুটা কম ঠিক তেমনি রোগীদেরও কম থাকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীরে ২৫ ট্রিলিয়ন(প্রায়) রেড সেল থাকে এবং ২৫০ বিলিয়ন রেড সেল প্রতিদিন Turnover হয়। শতকরা হিসাবে ১%। যখন আমরা রক্ত দান করি তখন প্রায় ২.২৫ ট্রিলিয়ন রেড সেল চলে যায় শরীর থেকে। তাই রক্তদান করা পর Turnover স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়।
রক্ত দেওয়ার পর প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টার ভিতরেই প্লাজমার অভাব পুরন হয়ে যায়। রেড সেলের অভাব পুরন হতে সময় লাগে ৬-৮ সপ্তাহ, কিন্তু আয়রনের ৮-১২ সপ্তাহ সময় লেগে যায় যদি তার যোগান ঠিক মত থাকে। আর এই কারনে রক্ত দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে বছরে “তিনবার” সর্বোচ্চ (কোনও কোন ক্ষেত্রে চারবার)। সেই হিসাবে প্রতিবার ৪৫০ মিলি করে হলে বছরে ১৩৫০ মিলি।
এখন আসি এফেরেসিস করার সময় কি হয় তা নিয়ে আলোচনা করার দিকে। প্রতিবার এফেরেসিস করার সময় গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ৮০-১০০ মিলি রক্ত মেশিনে রয়ে যায়। এই পরিমান রক্ত শরীরে আর ফেরত আসেনা। যদি ১৩৫০ মিলি পরিমান রক্ত আমরা বছরে দান করা যায় তাহলে বছরে কতবার এফেরেসিস প্রক্রিয়ায় রক্তদান করা যায়? সহজ হিসাবে ১৩৫০÷ ৮০= ১৬ বার (প্রায়)। গাইডলাইনে বলা আছে বছরে ২৪ বার দান করা যাবে কিন্তু এটা সর্বোচ্চ লিমিট এবং এই গাইডলাইন উন্নত দেশের তৈরি। আমাদের দেশে আমরা যে পরিমান আয়রন গ্রহন করি তা দিয়ে এই গাইডলাইন অনুসরন করা আসলেই কঠিন। উন্নত দেশ জাপানেও কিন্তু ১৬ বারের বিষয়ে মতামত প্রদান করেছেন তাদের গবেষকগন।
ডেঙ্গু মৌসুমে এফেরেসিসের চাহিদা অনেক গুন বেড়ে যায় এবং ডোনারদের মাঝেও প্রতিযোগিতা দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে কে কতবার দিচ্ছে তা নিয়ে। এটি কোনোভাবেই উচিত না। ডোনারের নিজের অভাবই যেখানে পুরন হয়না সেখানে রোগী উপকার পাবে কিভাবে এই হিসাবটাও মাথায় রাখা উচিত সম্মানিত ডোনারদের।